পরিশ্রমে সুদিনের যাত্রা
গ্রামের সহজ সরল ছেলে রফিক ।সাত ভাইবোনের মধ্যে ছোট। রফিকের বাবা মহিউদ্দিন একজন কৃষক।এত বড় পরিবারের দেখভাল করা তাঁর জন্যে সত্যিই কষ্টের বিষয় । যে সময়ের কথা বলছি তখন গ্রামে গ্রামে অপরিকল্পিত পরিবার ব্যবস্থা সাধারন ব্যাপার ছিল।রফিক সবার ছোট হলেও ছোটবেলা থেকে যথেষ্ট পরিশ্রমি ছিল। এদিকে রফিকের খালার বিয়ে হয়েছিল পাশ্ববর্তী গ্রামে। রফিকের খালু ব্যাংকে চাকরি করে । মোটামুটি সচ্ছল পরিবারই বলা চলে। আগের দিনে গ্রামে গন্জে দেখা যেত যাদের অনেকগুলো ছেলেমেয়ে থাকত তারা ছেলেদেরকে বিভিন্ন সচ্ছল পরিবারে কাজের জন্য রেখে আসত বছর চুক্তিতে। খাবে দাবে, প্রয়োজনীয় কাপড় পাবে সাথে বছর শেষে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পাবে।রফিকের বাবা মহিউদ্দিন ও এরকম সিদ্ধান্ত নিলেন। তাঁর ছেলেদেরকে তিনি এলাকার বিভিন্ন বিত্তশালী পরিবারে কাজে পাঠাবেন বলে মনস্থির করলেন। রফিক যেহেতু পরিশ্রমী ছিল তাই তার খালু তাকে খুব পছন্দ করতেন। তিনি যখন জানতে পারলেন যে রফিকের বাবা রফিকে অন্যত্র কাজে পাঠাবেন, তখন তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন রফিকে নিজের কাছে এনে রাখবেন। থাকা খাওয়া, বিয়ে থা সব দায়িত্ব নিজে নিবেন। তাই কয়েকদিন পর রফিকেদের বাড়ি গিয়ে রফিকের মা বাবা কে বিষয় টি খুলে বললেল। তাঁরা অমত করলেন না।রফিক তার খালুর সাথে চলে গেল। রফিক যখন খালা বাড়ি পৌছল তখন তার খালা আর খালাত ভাইবোনেরা তাকে ভালোভাবেই গ্রহণ করল। রফিক খালাবাড়ি থাকে কর্ম করে এভাবেই চলতে লাগল দিন। দেখতে দেখতে রফিক বড় হতে লাগল। রফিক বড় হওয়ার সাথে সাথে তার কাজের ধরন এবং দায়িত্ব জ্ঞান ও বাড়তে লাগল। খালুর পরিবারের সমস্ত কাজকর্ম সে গুছিয়ে করতে লাগল। চাষাবাদ থেকে শুরু করে সবধরনের কাজেই সে পারদর্শী ।রফিক যখন আঠারো বছরে পা দিল সে সিদ্ধান্ত নিল নিজের মত করে চলবে যেই কথা সেই কাজ । কিছুদিন পর তার সিদ্ধান্তের কথা সে তার খালুর কাছে জানাল। খালু প্রথমে অমত করলেন। এরকম কর্মঠ একজন লোককে তিনি হাতছাড়া করতে চাইলেন না। কিন্তু রফিকের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তিনি রাজি হয়ে গেলেন ।রফিক বাড়িতে চলে গেল। বাড়িতে গিয়ে একটা ভ্যান গাড়ি কিনল।এরপর শুরু হল তার জীবন সংগ্রাম । রফিক ও তার বড় ভাই শফিক দুইজন মিলে ভ্যানে করে যাত্রী আর পন্য বহন শুরু করল। গ্রামে তখন সবেমাত্র ভ্যান গাড়ি নামতে শুরু করেছে ।ফলে ইনকামও ভাল। কখনো যাত্রী আবার কখনো বা মালামাল নিয়ে দূরদূরান্তের গ্রামে চলাচল করা তাদের নিয়মিত কাজ ।আস্তে আস্তে তাদের আয় বাড়তে লাগল।মূলত যাত্রীদের সাথে ভালো ব্যবহারই তাদের জন্য সাফল্য বয়ে আনল।একবার যারা তার ভ্যানে উঠেছে কোন দরকার হলে আবারো খবর পাঠাতো। দেখতে দেখতে তারা তাদের ইনকামের টাকা দিয়ে বাড়িতে ছোট একটা টিনের ঘর নির্মাণ করল। অল্প সল্প কিছু জমি বন্ধক রাখল। তাদের দিন ভালোভাবেই চলতে লাগল ।টাকা পয়সা যেহেতু ভালোই জমেছে তাই রফিক সিদ্ধান্ত নিল তার বড় ভাই শফিককে প্রবাসে পাঠাবে।তখনকার সময় ত্রিশ চল্লিশ হাজার টাকা দিয়েই মধ্যেপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কাজের জন্য যাওয়া যেত।পরবর্তী ছয়মাসের মধ্যে শফিকের প্রবাস যাত্রা সম্পন্ন হল। শফিক ভালোভাবেই বিদেশে কাজ করতে লাগল।মাস যায় শফিক টাকা পাঠায় । এদিকে রফিক ঐ টাকায় চাষাবাদ করতে থাকে ।চাষের জমিও বাড়াতে থাকে।ফল ফসলে ভরে যায় তাদের জমিগুলি।বেশ ভালোই চলতে থাকে তাদের জীবন ।এরকম আরও অনেক অনুপ্রেরণাময় বাস্তব কাহিনী আমাদের অজান্তে চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ।সম্পদের পিছনের কাহিনী সবসময় পরিশ্রমেরই হয় । মাটির ভাঁজে ভাঁজে ঘামের গন্ধেই উদয় হয় নতুন দিনের সূর্য ।
0 Comments