গ্রীক রূপকথায় নারী উপাখ্যান
আসুন রুপকথার এক নারীর গল্প বলি। মেডুসা'র নাম তো শুনেছেন? গ্রীক মিথোলজিতে বর্নিত ভয়ংকর হিংস্র মেডুসার গল্প বলছি। যার মাথা ভর্তি চুলের বদলে ছিলো এক ঝাক সাপ। যার দৃষ্টি পড়লেই পাথরে পরিনত হতো যে কোনো মানুষ। এই রাক্ষুসী মেডুসা'র আরেকটি ভার্সন বর্নিত আছে রোমান মিথোলজিতে। রোমানদের মতে মেডুসা কোনো রাক্ষুসি ছিলো না। বরং সে ছিলো অনিন্দ্য সুন্দরী এক রমনী। সারা দেশের পুরুষেরা ছিলো মেডুসার রুপ মুগ্ধ। কিন্তু মেডুসা ছিলো দেবী এথেনার একান্ত অনুগত ভক্ত। এথেনার মন্দিরের প্রধান পুরোহিত ছিলো মেডুসা। আর এথেনার পুরোহিত হবার প্রধান শর্ত হলো কুমারিত্ব। তাই সারা দেশের মানুষ মেডুসার মন জয় করতে পাগল হলেও মেডুসা তাদের কাউকে কাছে ঘেষতে দিতো না। মনে প্রানে সে ছিলো শুধুই দেবী এথেনার প্রতি নিবেদিত। কিন্তু অতিরিক্ত রূপ থাকলে যা হয়, মেডুসার চোখ ধাধানো সৌন্দর্যের কথা ভ্যুলোক ছাড়িয়ে পৌছে গেল দেবতাদের কাছে। সমুদ্রের দেবতা পসাইডন প্রবল ভাবে অনুরক্ত হয়ে পড়লেন মেডুসার প্রতি। নানা রকম ছলেবলে মেডুসাকে তিনি কাছে পেতে চাইলেন। কিন্তু কুমারী মেডুসা তো কিছুতেই পসাইডনের হাতে ধরা দেবে না। পসাইডনের সব রকম আহবান নাকচ করে দিয়ে সে বিশ্বস্ত রইল তার দেবীর প্রতি। তাতে করে স্বর্গের দেবতার রাগ চরমে উঠল। তিনি সমুদ্রের রাজা। সামান্য এক মনুষ্য নারী তার আহবান ফিরিয়ে দেবে, এই অপমান তিনি মানবেন কেন? পসাইডন জোর করে ভোগ করতে চাইলেন মেডুসাকে। মেডুসা আত্মরক্ষার্থে লুকালো তার দেবী এথেনার মন্দিরে। কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করল দেবীর কাছে। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হলো না। খোদ এথেনার মন্দিরেই পসাইডন ধর্ষণ করল মেডুসাকে। তারপর কি হলো? এথেনা যখন জানতে পারলেন মেডুসার ধর্ষনের কথা, তখন তিনি উলটো মেডুসাকেই অভিসম্পাত দিলেন। মেডুসা নাকি পসাইডনকে প্রলুব্ধ করে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলো মন্দিরের অন্দরে। মন্দিরে এহেন দেহবিনিময়ে লিপ্ত হওয়ায় মেডুসা মন্দিরের পবিত্রতা কলুষিত করেছে। তাই এথেনার অভিশাপে মেডুসার মাথার প্রতিটি চুল একএকটি বিষাক্ত সর্পে পরিনত হলো। আর তার দৃষ্টি সীমানায় যদি কোনো মানুষ পড়ে তবে সে পরিনত হবে পাথরের মুর্তিতে। অনিন্দ্য সুন্দরী মেডুসা পরিনত হলো রূপকথার সবচেয়ে জঘন্য দানবে।
এথেনা কেন এই কাজটি করেছিলেন?
এর দুটো ব্যাখ্যা আছে। মেডুসার সৌন্দর্য আর তার প্রতি দেশের সকল পুরুষের কামনা দেখে জ্ঞানের দেবী এথেনার বুকেও হিংসা জেগে উঠেছিলো। তাই মেডুসা যখন প্রার্থনা করছিলো তখনো তিনি ওর সাহায্যে এগিয়ে আসেননি। তিনি চাইছিলেন মেডুসার রূপ কলুষিত হোক।
অথবা হতে পারে মেডুসার ধর্ষক ছিলো প্রবল প্রতাপশালী সমুদ্র দেবতা পসাইডন। পসাইডনের বিরুদ্ধে কিছুই করার ক্ষমতা ছিলো না এথেনার। তাই ক্ষমতাবান সমুদ্রদেবকে উহ্য রেখে ধর্ষিত মেডুসার দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছিলেন জ্ঞানের দেবী।
মেডুসা তার একনিষ্ঠ আনুগত্য আর বিশ্বাসের পুরষ্কার হিসেবে পরিনত হয়েছিলো পুরানের সবচেয়ে কুতসিত দানবে।
আর তাকে দানবে পরিনত করেছিলো আরেকজন নারী। #mythology #collected from Shakil Ahmed Profile.
0 Comments