গ্রাম বাংলার লোককথা
প্রথম পর্ব
আজ থেকে শুরু করছি গ্রাম বাংলার লোককথা নিয়ে ছোট গল্প । এগুলো আসলে নিছক কোন গল্প নয় মানুষের কাছে থেকে সংগৃহীত বাস্তব বর্ণনা ।আজ লিখব নওগাঁ জেলার দূরবর্তী এক নাম না জানা গ্রামের গল্প।গ্রামের ইতিহাস খুবই পুরনো ।এখন পরিবর্তনের হাওয়া লাগতে শুরু করেছে।এখন আসা যাক মূল বর্ণনায়। গ্রামের উওর পূর্বে আবাদি জমি । সবুজে ছেয়ে থাকে সবসময়। পশ্চিম দিক দিয়ে বয়ে গেছে ছোট্ট নালা। একসময় নালা প্রবহমান ছিল। এখন আস্তে আস্তে বরাট হয়ে যাচ্ছে।গ্রামের আসল আকর্ষণ হল নালার উপরের দরগা।লোকে বলে বিবি মার দরগা।কথিত আছে উনার দুই পা নালার দুই পাড়ে থাকত। সবই অবশ্য শোনা কথা। কিন্তু কেইবা যাচাই করতে পারে বলেন ।দূরদূরান্তের গ্রাম থেকে লোকজন আসে দরগায় মানত করতে। কেউ বা দেয় মুরগি, কেউ দেয় ছাগল, কেউ দেয় দুধ।যে যা পারে সাধ্যমতো দিয়ে মানত করে যায়। লোকেরদের বিশ্বাস এতে তাদের মঙ্গল হবে। মঙ্গল অমঙ্গলের কথা কেউ বা বলতে পারে, বলেন। সবই মানুষের বিশ্বাস। বিশ্বাসে শান্তি মেলে।পবিত্র আশুরার দিনে দরগােয় যথাযোগ্য মর্যাদার মাধ্যমে পালিত হয় আশুরা।লোকজন একত্রিত হয়। ইমাম হাসান হোসেনের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে। চারদিকের আকাশ বাতাস ভারী হয়ে যায় বিলাপের শব্দে ।দরগায় ছিল একটি বটগাছ ।লোকমুখে শোনা যায় আগের দিনে যখন নালা প্রবহমান ছিল, তখন এখান দিয়ে প্রতিদিন অনেক নৌকা যেত বিভিন্ন মালামাল নিয়ে । কথিত আছে বটগাছের নিচ দিয়ে নৌকা যাওয়ার সময় বটগাছ আপনা আপনি নিচু হয়ে নৌকা আটকে দিত।তারপর নৌকা থেকে কিছু মালামাল নালায় দিয়ে দিলে নৌকা আপনা আপনি চলতে শুরু করত। আগে দিনের বেলাযেও একাকেউ ওখানে যেতে সাহস করত না, কিন্তু এখন আস্তে আস্তে বসতি গড়ে উঠায় মানুষ স্বাভাবিক ভাবেই চলাফেরা করে।এক সময় অনেক খেজুর গাছ ও ছিল নালার পাড়ে। খেজুর গাছে অনেক খেজুর হত। গ্রামের ছেলে মেয়েরা মজা করে খেজুর খেত।আজ খেজুর গাছও নেই।সময়ের সাথে হারিয়ে গেছে অজানা অস্তিত্বে।
গ্রামের রাস্তার দুই পাশে একসময় ঘন ছনের বন ছিল। লোকজন বাড়ির চারদিকে ছাওনি বেড়া দিত। এখন আর ছনের বন নেই । জায়গা ছেড়ে দিতে হয়েছে অন্য গাছের জন্য । এভাবেই বাংলাদেশের কত শত গ্রাম বয়ে বেড়ায় ইতিহাস ঐতিহ্য। লেখা হয় কত লোককথা, সেখানে স্থান পায় মানুষের সুখ দুঃখ হাসি কান্নার কথা।
0 Comments